শিক্ষক  Hotel 

শিক্ষক কীভাবে প্রকৃত মর্যাদাবান হবেন

শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য প্রতিবছর পালিত হয়ে থাকে 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস'। শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই দিবস পালিত হয়ে থাকে। ইউনেস্কোস্বীকৃত 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস' শিক্ষকগণের জন্য অবশ্যই একটি মর্যাদার দিন।

শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য প্রতিবছর পালিত হয়ে থাকে 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস'। শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই দিবস পালিত হয়ে থাকে। ইউনেস্কোস্বীকৃত 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস' শিক্ষকগণের জন্য অবশ্যই একটি মর্যাদার দিন। শিক্ষায় ও উন্নয়নে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একদিন নয়, কয়েকদিন নয়, প্রতিদিনই শিক্ষকগণ সর্বাধিক মর্যাদার দাবি রাখেন। অনেকেই বলে থাকেন, শিক্ষকগণের মর্যাদা এখন আগের তুলনায় অনেক কম! প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষকতা কী? শিক্ষকের প্রকৃত মর্যাদা কী? কীভাবে শিক্ষক সত্যিকারের মর্যাদাবান হবেন? শিক্ষককে মর্যাদাবান করার দায়িত্ব কার? এ সকল বিষয় শুধু বিশ্ব শিক্ষক দিবসেই নয়, প্রতিদিনই গভীরভাবে ভেবে দেখা, আলোচনা করা ও পর্যালোচনা করা উচিত।

মানবসন্তানকে মানুষে পরিণত করার ঐকান্তিক তপস্যা হচ্ছে শিক্ষকতা। তাই পৃথিবীর সব দেশেই শিক্ষকের প্রকৃত মর্যাদা তুলনামূলক সর্বাধিক। সামষ্টিক বিবেচনায় যে কোনো পেশার তুলনায় শিক্ষকতা অধিক সম্মানজনক। কারণ শিক্ষকতা মূলত একটি ব্রত। তাই প্রতিটি সমাজেই পেশাদার শিক্ষকের পাশাপাশি অগণিত অপেশাদার শিক্ষক বিদ্যমান। শুধু পেশা হিসেবে শিক্ষকতায় পূর্ণ সফলতা নেই, পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তি নেই। শিক্ষাদান হচ্ছে অতি উত্তম পূণ্য কর্ম। মহান সৃষ্টিকর্তা নিজেই প্রধান শিক্ষক। বিভিন্ন ধর্মের প্রবর্তকগণ ছিলেন উৎকৃষ্ট শিক্ষক। অর্থাৎ উৎকৃষ্ট মানবেরাই উৎকৃষ্ট শিক্ষক। উৎকৃষ্ট মানব তথা উৎকৃষ্ট শিক্ষকের মর্যাদাও উৎকৃষ্ট। শিক্ষক ছাড়া কোনো সমাজ নেই। সব মানুষেরই শিক্ষক আছেন। যে সমাজের শিক্ষক যত বেশি উৎকৃষ্ট, সে সমাজের মানুষ তত বেশি উৎকৃষ্ট। 

বর্তমান বাস্তবতায় উৎকৃষ্ট শিক্ষকের সংখ্যা অনেকটা রাষ্ট্রীয় মর্যাদার ওপর নির্ভরশীল। যে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকের সম্মান ও সম্মানী বেশি, সে দেশে উৎকৃষ্ট শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। যে দেশে উৎকৃষ্ট শিক্ষকের সংখ্যা বেশি, সে দেশে উৎকৃষ্ট নাগরিকের সংখ্যাও বেশি। উৎকৃষ্ট নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষকের সম্মান ও সম্মানী সর্বাধিক নির্ধারণ করা কল্যাণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিক্ষকের সার্বিক মর্যাদা তথা সম্মান ও সম্মানী সর্বাধিক হলেই সর্বাধিক যোগ্য লোক শিক্ষক হন। এটিই বর্তমান বাস্তবতায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রের সর্বত্র ন্যায়-নীতিপরায়ণ যোগ্য লোক নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষক হিসেবে সর্বাধিক ন্যায়-নীতিপরায়ণ যোগ্য লোক নিশ্চিত করা। কোনো রাষ্ট্র যদি তা করতে ব্যর্থ হয় বা অনীহা দেখায় তো সেই রাষ্ট্রের নাগরিকদের সততা, সভ্যতা, যোগ্যতা ও দক্ষতা অনিশ্চিত। তাই শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হয়। 

সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকের মর্যাদা যতই ওপরে নির্ধারণ করা হোক না কেন, শিক্ষক নিজে উৎকৃষ্ট না হলে তা বজায় রাখা অসম্ভব। শিক্ষক নিজে নিকৃষ্ট হলে মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। মর্যাদা বা ঘৃণা মানুষের অন্তর্নিহিত বিষয়। সদা সর্বদা এটির বহিঃপ্রকাশ নাও ঘটতে পারে। শিক্ষক উৎকৃষ্ট হলেই মানুষের কাছে বৃদ্ধি পায় তাঁর প্রকৃত মর্যাদা। যে শিক্ষক যত বেশি উৎকৃষ্ট সে শিক্ষকের প্রকৃত মর্যাদা তত বেশি। 

দাপট প্রদর্শন ও শ্রদ্ধা অর্জন এক নয়। দাপটে প্রকৃত মর্যাদা নেই, শ্রদ্ধায় প্রকৃত মর্যাদা আছে। যে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে যত বেশি সুশিক্ষা প্রদান করতে সক্ষম, সে শিক্ষক তত বেশি শ্রদ্ধা অর্জন করতে সক্ষম। শিক্ষকের জ্ঞানের গভীরতায় ও দক্ষতার উচ্চতায় বিস্তৃত থাকে শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধাবোধ। শিক্ষার্থীর মনে শিক্ষকের একটা চিত্র অঙ্কিত হয়। সেই চিত্রটি যত উত্তম হয় শিক্ষার্থী তত শ্রদ্ধাশীল হয়। 

শিক্ষকের চিন্তা-চেতনা, চলা-বলা  ও কাজ-কর্মের প্রতিফলন ঘটে শিক্ষার্থীর মনে। শিক্ষক উত্তম চিন্তা ও কর্ম করতে ব্যর্থ হলে উত্তম মানুষ তৈরি করতে ব্যর্থ হন। সমাজ ও রাষ্ট্রে উত্তম মানুষের অভাব হলেই শিক্ষকের মর্যাদার অভাব হয়। উত্তম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেই শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এই উত্তম মানুষ তৈরির দায়িত্ব শিক্ষকের। যিনি শিক্ষক তিনি কোনোভাবেই অবহেলা করতে পারেন না এই দায়িত্বে। কেননা শিক্ষকতা একটি ব্রত। নিয়োগপত্র পেলেই শিক্ষক হওয়া যায় না, শিক্ষক হয়ে উঠতে হয়। 

উল্লিখিত আলোচনা গভীরভাবে উপলব্ধি করে, পর্যালোচনা করে, প্রত্যেকেই নিজেকে মূল্যায়ন করে দেখা উচিত শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা কতটুকু? নিজে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি যদি আমার শিক্ষককে সদা সর্বদা যথাযথ শ্রদ্ধা করি, যে সকল শুভ কারণে আমি আমার প্রিয় শিক্ষককে অধিক শ্রদ্ধা করি, নিজে শিক্ষক হয়ে তেমন হবার জন্য যদি আন্তরিক চেষ্টা করি; সাধারণ নাগরিক হিসেবে সমাজের শিক্ষকগণের প্রতি যদি আমি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকি। সমাজের নেতা হয়ে, জনগণের প্রতিনিধি হয়ে, রাষ্ট্রের আমলা হয়ে, রাষ্ট্রপতি হয়ে, সরকারের মন্ত্রী হয়ে আমি যদি নিজের তুলনায় শিক্ষককে অধিক মর্যাদাবান ভাবি এবং শিক্ষকগণের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য যদি আন্তরিক থাকি; তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে শিক্ষকগণের প্রকৃত মর্যাদা, সফল হবে শিক্ষক দিবস উদযাপন। 


 

KhedmotKhojo | খেদমত খোঁজ

আমাদের সকল আপডেট পেতে
সাবস্ক্রাইব করুন

KhedmotKhojo | খেদমত খোঁজ